প্রয়োজনীয় তথ্য সমূহ

  • My Observations
  • রোগসমুহ

ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর

ভাইরাস সংক্রমন জনিত জ্বর ::   ইন্ফ্লুয়েন্জা জ্বর।

আমাদের দেশে বেশীরভাগ জ্বর হয় ভাইরাস সংক্রমন জনিত কারনে,
ভাইরাস জনিত জ্বর গুলোর মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে ইন্ফ্লুয়েন্জা (অতি পরিচিত ভাইরাস জ্বর)
জীবানুর নাম:                    ইন্ফ্লুয়েন্জা এ এবং ইন্ফ্লুয়েন্জা বি।
রোগ ছড়ায়:            নিশ্বাসের মাধ্যমে বাতাস বাহিত হয়ে।
কা’রা আক্রান্ত হয়?: যেকোন বয়সের যেকোন লিঙ্গের যেকোন স্থানের মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।

ইন্ফ্লুয়েন্জা জ্বর এ নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া যায়।

ইন্ফ্লুয়েন্জা জ্বর-এর সাধারন বৈশিষ্ট গুলো হলো,
*হঠাৎ শীত অনুভব ও প্রচন্ড শরীর ম্যজম্যজ, সমস্থ শরীর ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, গা ম্যাজম্যাজ করা, কফছাড়া কাশী, গলা ব্যাথা বা নাকে পানি সহ ১০০ এর বেশী জ্বর আসে। যা দ্রুত ১০৩থেকে ১০৫ হয়ে যায়। প্যরাসিটামল জাতীয় নাখেলে শরীরের তাপমাত্রা বা জ্বর আর স্বাভাবিক হয় না।
* জ্বর শুরুর পর থেকে (জ্বর না থাকা অবস্থায় ও) খাবারে তীব্র অরুচি থাকে, খেতে গেলে বমি হয় বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। (প্যারাসাইট জনিত ম্যালেরিয়া জ্বরে এবং ব্যকটেরিয়া জনিত টা্য়ফয়েড জ্বরে জ্বর না থাকা অবস্থায় এত তীব্র অরুচি থাকে না।)
*জ্বর ৫-৭ দিন স্থায়ী হয় এবং ওষুধ (যেমন প্যারাসিটামল) সেবন ব্যতিত     তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় নেমে আসে না।
*এতে চোখ চল্ছলে থাকে; চোখ নাকে পানি বা ডায়রিয়া বা ২/৩ বার পাতলা পায়খানার ইতিহাস ও থাক্তে পারে।
*বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে এ জ্বর খুব বেশী সংখ্যায় দেখা যায়; তাই
*রোগীর ইতিহাস নিলে জানা যাবে হয়তো পরিবারের অন্য কেউ অথবা প্রতিবেশী একজন বা একাধিক কেউ একই রকম অসুস্থতায় বা জ্বরে আক্রামত হয়েছে।
সাধারন জ্বরের রোগগুলোর তূলনা মুলক বৈশিষ্ঠ্য সমুহ।
জ্বরের রোগ
প্রধান কষ্ট
শরীর ম্যাজম্যাজ
জ্বরপূর্ব কষ্ট
জ্বর কমার ধরন
ভাইরাস জ্বর বা ফ্লু
ক্ষুধা মন্দা বমি ভাব
খুসখুসে কাশী
তীব্র
-১২ঘঃ শরীর ম্যাজম্যাজ
প্যারাসিটামল না খেলে কমে না।
টাইফয়েড
তীব্র মাথাব্যাথা
থাকে তবে কম
৩/৪দিনের জ্বর জ্বর ভাব
প্যারাসিটামল না খেলে কমে না।
ম্যালেরিয়া
দুর্বলতাবোধ
তেমন থাকেনা
তেমন থাকে না
প্যারাসিটামল না খেলে ও কমে
ইন্ফ্লুয়েন্জা জ্বর হলে  কি করতে হবে?
ন্ফ্লুয়েন্জা জ্বর ভাইরাস সংক্রমনজনিত একটি স্বল্পদিন স্থায়ী অসুস্থতা এবং আবার এই ইন্ফ্লুয়েন্জা ভাইরাস বিরোধী এন্টিভাইরাল ঔষধগুলো বেশী দামী এবং আমাদের দেশে প্রয়োগ হয় না বিধায় ইন্ফ্লুয়েন্জা জ্বরে উপসর্গ ওয়ারী পরামর্শ দেয়া উচিৎ সরাসরি ঔষধ লিখে না দিয়ে। রোগের প্রকৃতি, স্থায়িত্ব এবং করনীয় সম্পর্কে রোগী এবং রোগীর লোককে বুঝায়ে দিতে হবে।
ইন্ফ্লুয়েন্জা জ্বর এর প্রধান উপসর্গগলো যেগুলোর ব্যাপারে রোগীকে বুঝিয়ে বলতে হবে সেগুলো হলো
০১. জ্বর, শরীর ব্যাথা,
০২. বমি ও ক্ষুধামন্দা (খেতে না পারা)
০৩. নাকে পানি ও খুসখুসে কাশ

জ্বর এবং শরীর ব্যাথা -এর জন্য কি করা যায়:
@ স্বাভাবিক ঠান্ডা পানিতে ভেজা কাপড়ে পুরো শরীর মুছতে হবে, তবে বারবার মাথা ধুয়ে দেয়ার প্রয়োজন নাই।
@জোরে ফ্যান চালিয়ে দিতে হবে, পাখা দিয়ে বাতাস করতে হবে,
@ঘন ঘন স্বাভাবিক ঠান্ডা পানি বা কোন ঠান্ডা পানীয় পান করতে রোগীকে পরামর্শ  দিতে হবে।
@জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল দিতে হবে,

প্যারাসিটামল কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে?
’’প্যারাসিটামল খাওয়ানো ও যায় আবার মলদ্বারেও প্রয়োগ করা যায়।’’
ডোজ:- প্রতি কেজী শরীরের ওজনের জন্য ১৫-২০মিগ্রা প্রতিবার, অবশ্যই চার ঘন্টার মধ্যে পুনঃ প্রয়োগ করা যাবে না।
১ বড়ি প্যারাসিটামলে থাকে                = ৫০০মিগ্রা ও ১২০ মিগ্রা এবং
১টা সাফোজিটরীতে থাকে          = ২৫০ ও ১২৫ মিগ্রা
১ চামুচে                              = ১২০ মিগ্রা
উদাহরন:  ২ বছরের ১টা বাচ্চার (ওজন হতে পারে ১২ কেজী) জন্য প্রয়োজন ১২*১৫=১৮০ মিগ্রাঃ অর্থাৎ দেড় চামুচ হবে। 
 কিন্তু
!এসপিরিন দেয়া কখনো উচিৎ না এবং
!অন্য কোন এন্টিইনফ্লেমেটরী ব্যাথানাশক (NSAID) দেয়া ঠিক নয়।

বমি হলে কি করতে হবে?
@বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কেন্দ্রিক কারনে এই বমি হয়। তাই বমি বন্ধ করার জন্যে কোন ওষুধ দেয়া ঠিক না। তবে ডোমপ্যারিডন চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।
@বমি হওয়াকালীন সময়ে রোগীকে সুবিধাজনকভাবে বসাইয়ে বা শোয়ায়ে রাখতে হবে। এবং এসময় কোন কিছু খেতে না দিয়ে, বমি বন্ধ হওয়ার ১৫-২০ মিনিট পর বেশী পরিমানে পানি বা অন্য কোন ঠান্ডা পানীয় পান করতে বা তরল খাবার খাওয়ার জন্য রোগীকে পরামর্শ  দিতে হবে।
@বারবার বমি হলে শরীরে পানি কমতির সৃষ্টি হয়। পানি কমতির পরিমান নির্নয় করে প্রয়োজনে আইভি ফ্লুইড দেয়া প্র্রয়োজন যাতে শরীরে মারাত্বক পানি-স্বল্পতার সৃষ্টি না হয়। তবে বমির রোগীকে মুখে খাবার বন্ধ রেখে আইভি চেনেল দিয়ে ক্রমশঃ ফ্লুইড দেয়া যেতে পারে। তবে বেশী জ্বর থাকাবস্থায় কোন কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলতে হবে যাতে বমির উদ্রেক না হয়।
@পাকস্থলীর অম্লতা না বাড়ার জন্য (যা ক্ষুধা মন্দা এবং বমির কারন হতে পারে অনেক সময়) H2 Blocker (Ranitidine) দেয়া যেতে পারে।
@ জ্বরাবস্থায় খীচুনী-প্রবন রোগীকে খীচুনী নিরোধক দেয়া প্রয়োজন।

নাকের পানি এবং এ অবস্থায় খুসখুসে কাশী র জন্য কি করা
          ইন্ফ্লুয়েন্জা জ্বরে নাকের পানি ১-২ দিন থাকে। অনেকের মতে এ জন্য এন্টি-হিমটামিন ব্যাবহার করা ঠিক না। তাতে দেখা গেছে পরবর্তিতে এসব রোগীর শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমন ও শ্বাসনালীর বাধাজনিত কাশী হয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
          তবে নাকের শ্বাস পথ মুক্ত রাখার জন্য এবং নাকেন পানিতে যাতে জীবানু না জম্মে সেজন্য নাক পরিস্কার করতে হবে লবন মিশ্রিত বিশুদ্ধ পানি দিয়ে । বানিজ্যেকভাবে যেটি পাওয়া যায় সেটার নাম নরসল ড্রপ যা ২/৩ ফোটা করে উভয় নাকে দিনে ২/৩বার করে দেয়া যেতে পারে। বিশেষত খাওয়ার আগে এবং ঘুমানোর সময়।
          এখানে উল্লেখযোগ্য যে, নাকের পানির কারনে নাক বন্ধ থাকাতে এ সময় রোগী মুখ দিয়ে নিশ্বাস ফেলে বিধায় গলায় প্রদাহ হয় এবং রোগীর আহারের এবং কথা বলার সময় কাশীর সৃষ্টি হয় বার বার। এ কাশীতে এন্টিবায়োটিক দেয়ার কোন প্রয়োজন  হয় না। তাতে কাশী তো কমেই না উপরন্তু চিকিৎসা বিভ্রাট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তবে যেহেতু এ কাশীর উৎপত্তি গলা সেজন্য রোগীকে লেবুর রস মেশানো কুসুম গরম জল খেতে বলা যাইতে পারে এবং লবন সহ কুসুম গরম জল দিয়ে গরগরা বা গারগ্লিং করার জন্য উপদেশ দেয়া উচিৎ।  তবে মিন্ট মেশানো লজেন্স চুষলে ও এই কাশি কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু রোগীকে এবং রোগীর লোককে আশ্বস্থ করতে হবে এ কাশি ভয়ের কিছু নয় এবং ১-২ দিনেই সেরে যাবে।

ইন্ফ্লুয়েন্জা জ্বর না হওয়ার জন্য কি করা যায়?
ইন্ফ্লুয়েন্জা প্রতিষেধক দুই ধরনের টিকাবীজ আছে
01:- live attenuated Influenza Vaccine, 02:- Inactivated Influenza Vaccine

live attenuated Influenza Vaccine
Inactivated Influenza Vaccine
কি প্রকার ভ্যাকসিন
জীবিত ভাইরাসের ভ্যাকসিন
নিষ্ক্রিয় ভাইরাসের ভ্যাকসিন
প্রয়োগ পথ
নাকের ভেতর স্প্রে
এাংসপেশীতে ইনজেকশান
কাদের দেয়া যাবে
সুস্থ ৫- ৪৯ বছরের জনগনকে
মাস উর্ধ যেকোন জনকে
কাদের দেয়া যাবে না
যেকোন ইমিউন হ্রাসকৃতদের
৬মাসের নিচে
অন্যান্য টিকার সাথে
দেয়া যাবে
দেয়া যাবে
বছরে কয়বার
বছরে ১ বার (প্রতিবছর)
বছরে ১ বার (প্রতিবছর),
৯ বছরের কমবয়েসিদের জন্য ১মাসের
ব্যবধানে ২ ডোজ সুপারিশকৃত
আমাদের দেশে এখন  Inactivated Influenza Vaccine পাওয়া যায়, যার তথ্য নিম্ন রুপ
Inactivated Influenza Vaccine

নিষ্ক্রিয় ভাইরাসের ভ্যাকসিন
   বয়সগ্রুপ
পরিমান
ডোজসংখ্যা
   ৬মাস-৩৫মাস
০.২৫মিলি
১ - ২ ডোজ
   ৬বঃ-৮বঃ   
  ০.৫০মিলি
   ১ - ২ ডোজ
   ৮বঃ+         :
 ০.৫০মিলি
১ ডোজ
  ভ্যাকসিনের নাম ও
  প্রস্থুতকারী কোম্পানী
*******
কাদের জন্য
  Fluzone  (Aventis Pasteur)
৬মাস উর্ধ যে কোনজন
  Fluviron (Chiron)
৪বঃ উর্ধ যে কোনজন
  Flumist(Medimmune)
৪বঃ-৪৯বঃ
বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন
এই জ্বর ভাইরাস সংক্রমন জনিত কারনে হয় বিধায় অন্য কোন ওষুধ, বিশেষত কোন এন্টিবায়োটিক খেতে বলার বা দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নায়। তাতে একদিকে যেমন রোগীর টাকা নষ্ট হয়, অন্য দিকে এন্টিবায়োটিকের জীবানু বিরোধী ক্ষমতা লোপ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ইন্ফ্লুয়েন্জা জ্বর এর জটিলতা সমুহ:
এই জ্বর ৫-৭ দিনের মধ্যে কমে যায়, তব
১. দ্রুত উচ্চ জ্বর আসার কারনে অনেক সময় খিচুনী সৃষ্টি হয়। *Convulsion
---------- তাই খীচুনী প্রবন বা খীচুনির ইতিহাস আছে এই রুপ ইন্ফ্লুয়েন্জা জ্বর এর রোগীকে শুরু থেকেই ডায়াজেপাম ০.১৫-০.২০ মিগ্রা/প্রতি কেজি হিসাবে টেবলেট ৬-৮ ঘন্টা পর পর দেয়া যেতে পারে ৪-৫ দিন খীচুনী না হওার জন্যে আবার । খীচুনী হলে ০.১৫-০.২০ মিগ্রা/প্রতি কেজি হিসাবে ২-৪ মিলি নরম্যাল স্যালাইনের সাথে মিশিয়ে মলদ্বার পথে ইন্জেকশান দেয়া হয় ।
২. তীব্র ক্ষুধামন্দা, অরুচির কারনে কম খাওয়া এবং পানি বা পানীয় না খাওয়া তদুপরি বমির কারনে শরীর থেকে পানি চলে যাওয়া, এসব কারনে প্রশ্রাব কমে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে কিডনীর ব্যর্থতা সৃষ্টি হতে পারে *Renal failure
-------------------- একদম মুখে খেতে পারে না এরকম রোগীকে পানি কমতির পরিমান নির্নয় করে প্রয়োজনে আইভি ফ্লুইড দেয়া প্র্রয়োজন যাতে শরীরে মারাত্বক পানি-স্বল্পতার সৃষ্টি না হয়। তবে পূন পুণ বমি করে এরম রোগীকে মুখে খাবার বন্ধ রেখে আইভি চেনেল দিয়ে ক্রমশঃ ফ্লুইড ( ৫% ডেকনট্রোজ স্যালাইন, ১০% ডেক্সট্রোজ, হার্টস ম্যান সল্যুশান) দেয়া যেতে পারে।
৩. পুর্ব থেকেই যাদের শ্বাস পথের ক্র্রনিক সংক্রমন থাকে (যেমন সাইনোসাইটিস, টনসিলাইটিস, ক্রনিক ব্রংকাইটিস) তাদের শ্বাস তন্ত্রের এ সকল অংশে ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমন দেখা দেয়।
-------------- এরুপ সম্ভাবনা আছে এরকম রোগীকে ক্লেভিউনেট যুক্ত এমোক্সিসিলিন শুরু থেকেই দেয়া প্রয়োজন ২৫মিগ্রা/কেজি দিনে  ৩ বার করে।

৪. অনেক ক্ষেত্রে জ্বর-পরবর্তি সময়ে তীব্র মানসিক ক্লান্তি বোধ ও অবসন্নতা, মাংসপেশির অবসতা এবং প্রচন্ড দূর্বলতা আসে যা ১মাস থেকে ৬ মাস পর্যন্ত থাকতে পারে।
--------- পটাশিয়াম যুক্ত খাবার বিশেষত তাজা ফল, ডাবের জল নিয়মিত খেলে মাংসপেশীর দুর্বলতা এবং অবশতা ধীরে ধীরে কমে আসে। তবে মানসিক অবসন্নতা যদি বেশি হয় তখন এন্টি ডিপ্রেসেন্ট দেয়া প্রয়োজন বিধায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।

ভাইরাস সংক্রমন জনিত অন্যান্য জ্বর সমুহ
          ইহাছাড়াও হাম, মাম্স, জলবসন্ত, ভাইরাল ডায়রিয়া (বাচ্চাদের); ঠান্ডা লাগা(সর্দি জ্বর), হাম; ভাইরাল হেপাটাইটিস (জন্ডিস) ইত্যাদি, এগুলোতে জ্বর ছাড়াও সম্পুর্ন শরীরের বা এর একাধিক অংশের স্থানীয় উপসর্গ থাকে, বিধায় এগুলো সহজেই সনাক্ত হয়ে থাকে। যেমন ডায়রিয়া, কাশি, গলা ব্যাথা, জন্ডিস ইত্যাদি।


No comments:

Post a Comment