ভাইরাস
সংক্রমন জনিত জ্বর:: ডেঙ্গু জ্বর
!ডেঙ্গু
জ্বর ’’ফ্লু জ্বরের মতো’’ এক প্রকার (আরবো ভাইরাস) ভাইরাস সংক্রমন জনিত জ্বর।
!জীবানু
বাহী এডিস মশার কামড়ে এ জ্বর হয়।
!৭ বা
ততোধিক দিন স্থায়ী উচ্চ জ্বর এ রোগের একটা বৈশিষ্ট্য
!এ জ্বর
এর কোন নিদ্দিষ্ট চিকিৎসা নেই,
আবার এই সংক্রমন প্রতিরোধের জন্য কোন ভ্যাকসিন ও নেই।
!একবার @ডেঙ্গু জ্বর হলে ও পুনরায় হওয়ার
সম্ভাবনা থেকে যেতে পারে।
!ডেঙ্গু জ্বর ৩ প্রকারের হয়:
@ডেঙ্গু জ্বর (সাধারন), যা বেশীর ভাগ হয়ে থাকে
@ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর (রক্তক্ষরন সহ) ডেঙ্গু
জ্বরের ১-২ % এ
মারাত্বক অবস্থার শিকার হতে পারে যাতে মৃত্যু ঝুকি ৫% (চিকিৎসা পেলেও)
@ডেঙ্গু সক সিন্ড্রোম:ডেঙ্গু জ্বরের ১-২ % এ
মারাত্বক অবস্থার শিকার হতে পারে যাতে মৃত্যু ঝুকি ৫০%
!সাধারনত বর্ষার সময়ে ( জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) এ জ্বর হতে
পারে যখন মশার বংশবৃদ্ধি বেশী হয়
!সংক্রমনকারী মশার কামড়ের পরে ৪ - ৬ দিনের মধ্যে এ জ্বর হয়।
(গড়: ৩- ১৪ দিন)
ডেঙ্গু
জ্বরের লক্ষন ও উপসর্গ এবং
বৈশিষ্ট সমুহ
√হঠাৎ করে তীব্র উচ্চ জ্বর
নিয়ে এ অসুস্থতা শুরু হয়,
√এজ্বর সার্বক্ষনিক থাকে।
কদাচিৎ ১০১০ এর কম হয়।
√সাথে শরীরে লাল লাল দানা দেখা
দিতে পারে,
√চোখের চারপাশে এবং পেছনে,
মাংস পেশীতে, গীরায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভুত
হয়,
√আর এই ব্যাথা এতো তীব্র যে এ
রোগ ব্রেক বোন বা ভাংগা হাড্ডির জ্বর হিসাবে পরিচিত।
√বমি বমি ভাব, বমি এবং ক্ষুধা
মন্দা সব ক্ষেত্রেই থাকে।
√জ্বরশুরুর ৩-৪ দিনের মধ্যে
শরীরে লাল দানা দেখা দেয়।
এ অসুস্থতা ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, তবে সম্পুর্ন সুস্থ হতে
১ মাসের অধিক সময় ও লাগতে পারে,
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৭-৮ দিনের দিকে রক্তের বিভিন্ন কোষজাতীয় উপাদান
কমে যেতে পারে। আর এ সময় রক্তের প্লাটিলেট কোষ জাতীয় উপাদান (যা শরীরের রক্তের
জমাট বদ্ধ হতে সাহায্য করে রক্ত
ক্ষরন হতে দেয় না) অত্যাধিক কমে যায় ফলতঃ রক্ত ক্ষরন শুরু হয় এবং তখন রক্ত নালী
থেকে রক্ত বের হয়ে যেতে থাকে, ফলে নাক, মুখ ও মাড়ি থেকে রক্ত ক্ষরন দেখা দিতে
পারে। রক্তক্ষরনের কারনে চামড়ার নিচে কালচে দাগ দেখা দেয় (চামড়ার নিচে রক্ত ক্ষরন)
যা শরীরেরভেতরে ও রক্তক্ষরন নির্দেশ করে। এ অবস্থায় খাদ্য নালী থেকেও রক্তক্ষরন হয়
বিধায় বমির সাথে রক্ত তেখা দিতে পারে এবং
মলের রং কালচে হতে পারে। ইহাই ডেংগৃু হেমোরেজিক জ্বর বা রক্তক্ষরন জ্বর যা খুবই মারাত্বক এবং যাতে মৃত্যুর
সম্ভাবনা ৫%.
ইহা ছাড়াও বমি, খেতে
না পারা, রক্ত নালী থেকে রক্তের পানি উপাদান বের হয়ে যাওয়ার কারনে শরীরের রক্তের
পরিমান বেশী কমে গিয়ে রক্তনালী গুলো কলাপস্ হয়ে কিডনি ও লিভারকে নষট করে ফেলে এবং
রোগীর মৃত্যুর হয়, যা ডেংগু
শক সিন্ড্রোম
হিসাবে পরিচিত এবং যাতে মৃত্যুর সম্ভাবনা ৫০% এর ও বেশী।
এ ডেংগু শক সিন্ড্রোম অবস্থার অগ্রিম সংকেৎ হলো
তীব্র পেট ব্যাথা,
স্থাযী ও অনবরত বমি, স্বাভাবিকের নিচে শরীরের তাপমাত্রা এবং অসহনশীল মনের
অবস্থা,চিকন দুর্বল দ্রুত নাড়ী, অত্যাধিক নিম্ন রক্ত চাপ। ইহা ছোটদের ছেয়ে বড়দের
মধ্যে এ মারাত্বক পরিনতি বেশী হতে পারে।
ডেঙগু
জ্বর নির্ণয়:
রোগীর শারিরীক পরীক্ষা উপসর্গ
এবং লক্ষন বিবেচনা করে এ রোগের প্রাথমিক সন্দেহ করা যেতে পারে, চিকিৎসার প্রয়োজনে।
সাধারনত রক্তে ডেগু জ্বরের ভাইরাস সনাক্ত করেই এ রোগ নির্নয় নিশ্চিৎ করা হয়। তবে
আমাদের দেশে এই পরীক্ষা ব্যয়বহুল ও মফঃস্বলে দুষপ্রাপ্য।
তবে পরোক্ষে এ রোগের ধারনা
পেতে হলে কিছু কিছু সাধারন রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে।
যেমন অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের
মতো এজ্বরে ও
রক্তে শ্বেত কণিকা কমে যায় (TC of WBC))
শ্বেত কনিকার ভেতর লিম্পোসাইট
এর আপেক্ষিক আধিক্য দেখা দিবে (DC of WBC)
তবে ৪-৫ দিনের দিকে রক্তের প্ল্যাটিলেট সংখ্যা কমতে থাকে, এ সংখ্যা ১০০০০০/মিলি
হলে হেমোরেজিক ডেংগু হওয়ার নির্দেশ থাকে) (Platelet Count)
ডেঙগু
জ্বরের চিকিৎসা
যেহেতু ইহা ভাইরাস জনিত রোগ,
আর যেহেতু এই ভাইরাসের উপর কার্য্যকর কোন এন্টিভাইরাল ঔষধ নাই সেহেতু চিকিৎসা
মুলতঃ উপসর্গ ভিত্তিক
জ্বর এর জন্য কি কি করা যায়:
@ স্বাভাবিক ঠান্ডা পানিতে ভেজা কাপড়ে
পুরো শরীর মুছতে হবে, বারবার মাথা ধোয়া প্রয়োজন নাই।
@জোরে ফ্যান চালিয়ে দিতে হবে, পাখা দিয়ে বাতাস করতে হবে,
@ঘন ঘন বেশী পানি বা অন্য কোন ঠান্ডা
পানীয় পান করতে রোগীকে পরামর্শ দিতে হবে।
@জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল দিতে
হবে, কিন্তু
!এসপিরিন
দেয়া কখনো উচিৎ না এবং
!অন্য কোন
প্রদাহ-বিরোধী ব্যাথানাশক (NSAID) দেয়া ঠিক নয়।
কারন এ ঔষধ গুলো
রক্তের প্লাটিলেটকে কমিয়ে ফেলতে পারে এবং রক্ত ক্ষরন প্রবনতাকে জটিল করে তুলতে
পারে। উল্লেখ্য যথাযত পরিমানে প্যারাসিটামল দেয়া হলে জ্বরের পাশাপাশি শরীর ব্যাথা
এবং মাথাব্যাথা ও উপশম হয়।
√ প্যারাসিটামল সিরাপ, বড়ি খাওয়ানো
যায় এবং আবার সাপোজিটরি মলদ্বারেও প্রয়োগ করা যায়।
ডোজ:- প্রতি কেজী শরীরের ওজনের জন্য ১৫ মিগ্রা প্রতিবার, অবশ্যই চার
ঘন্টার মধ্যে পুনঃ প্রয়োগ করা যাবে না।
১ বড়ি প্যারাসিটামলে থাকে=৫০০মিগ্রা
এবং
১ চামুচে=১২০ মিগ্রা
উদাহরন: ২ বছরের ১টা বাচ্চার
(ওজন হতে পারে ১২ কেজী) জন্য প্রয়োজন
১২*১৫=১৮০ মিগ্রাঃ
অর্থাৎ দেড় চামুচ হবে।
বমি হলে কি করতে হবে?
@বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কেন্দ্রিক কারনে
এই বমি হয়। তাই বমি বন্ধ করার জন্যে কোন ওষুধ দেয়া ঠিক না। তবে ডোমপ্যারিডন চেষ্টা
করে দেখা যেতে পারে।
@যেহেতু বমি হওয়ার সম্ভাবনা সব রোগীরই
থাকে সেহেতেু প্রত্যেক জ্বরের রোগীকে
আগেই প্রচুর পরিমানে পানী এবং ঠান্ডা পানীয় (যেমন কোক, জুস ইত্যাদি) খাওয়ার বŠাপারে সচেতন করিতে হবে।
@বমি হওয়াকালীন সময়ে রোগীকে
সুবিধাজনকভাবে বসাইয়ে বা শোয়ায়ে রাখতে হবে। এবং এসময় কোন কিছু খেতে না দিয়ে, বমি
বন্ধ হওয়ার ১৫-২০ মিনিট পর বেশী পরিমানে পানি বা অন্য কোন ঠান্ডা পানীয় পান করতে বা তরল খাবার খাওয়ার জন্য
রোগীকে পরামর্শ দিতে হবে।
@বারবার বমি হলে শরীরে পানি কমতির সৃষ্টি হয়।
পানি কমতির পরিমান নির্নয় করে প্রয়োজনে আইভি ফ্লুইড (Dextrose Saline or Cholera saline or
Hartsman Solution) দেয়া
প্র্রয়োজন যাতে শরীরে
মারাত্বক পানি-স্বল্পতার সৃষ্টি না হয়। তবে স্থায়ী বমির রোগীকে মুখে খাবার বন্ধ
রেখে আইভি চেনেল দিয়ে ক্রমশঃ ফ্লুইড দেয়া উচিৎ। এ অবস্থায় প্রশ্রাবের পরিমান ও সময়
এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে বেশী জ্বর থাকাবস্থায় কোন কিছু খাওয়া থেকে বিরত
থাকতে বলতে হবে যাতে বমির উদ্রেক না হয়।
@পাকস্থলীর
অম্লতা না বাড়ার জন্য (যা
ক্ষুধা মন্দা এবং বমির কারন হতে পারে অনেক সময়) H2 Blocker (Ranitidine) দেয়া যেতে পারে।
@
জ্বরাবস্থায় খীচুনী-প্রবন রোগীকে খীচুনী নিরোধক দেয়া প্রয়োজন।
Phenobarbitone 5-10mg / kg দিনে ১ বার
Diazepam 0.1 -
0.2mg/kg দিনে
৩ বার
শরীরের রক্তক্ষরনের কোন লক্ষন
দেখা দিলে বা প্লাটিলেট সংখ্যা নিম্ন দিকে (১,৫০,০০০ এর কম) হলে রোগীকে উচ্চতর
চিকিৎসা কেন্দ্র যেখানে এই প্লাটিলেট এবং রক্ত দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে সেখানে পাঠানো
প্রয়োজন। তবে রোগীকে আইভি ফ্লুইড দিয়ে রাখতে হবে।
যেহেতু
ডেংগু রোগের প্রতিষেধক কোন ভ্যাকসিন নাই এবং
চিকিৎসার নিদ্দিষ্ট কোন ঔষুধ নাই
সেহেতু রোগ না হওয়ার
একমাত্র উপায় মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা।
অন্যান্য মশার মতো
ডেংগু রোগবাহী এডিস মশা ও অন্ধকার অগভীর আবদ্ধ পানিতে ডিম পারে এবং বংশবৃদ্ধি করে।
শহরাঞ্চলে ফুলের টবে,
নারকেলের খোসায় জমা পানিতে মশা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। এসকল উৎস
স্থল ধংস করে মশা বৃদ্ধি রোধ করে,
মশার কামড়
থেকে রক্ষার জন্য মশারী ব্যবহার করতে হবে।
No comments:
Post a Comment