প্রয়োজনীয় তথ্য সমূহ

  • My Observations
  • রোগসমুহ

ভাইরাল হেপাটাইটিস

ভাইরাস সংক্রমন জনিত অন্যান্য অসুস্থতা::
ভাইরাল হেপাটাইটিস  বা ভাইরাসজনিত যকৃতের প্রদাহ

ভাইরাল হেপাটাইটিস  বা ভাইরাসজনিত যকৃতের প্রদাহ সাধারনত ৪ ধরনের ভাইরাসের কারনে হয়। এগুলো হলো
০১. হেপাটাইটিস এ, ০২. হেপাটাইটিস বি, ০৩. হেপাটাইটিস সি,০৪. হেপাটাইটিস ডি
এক্যুট ভাইরাল হেপাটাইটিস (এ) বা হেপাটাইটিস এ ভাইরাস সংক্রমন জনিত যকৃতের প্রদাহ

(আমাদের এখানে বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে যেমন গ্রীষ্ম ও বর্ষা কালে, সচরাচর যে জন্ডিসরোগীগুলো বেশী পরিমানে দেখা যায় সেগুলোর প্রায় সব ক্ষেত্রেই কারন হচ্ছে, এই হেপাটাইটিস এ ভাইরাস সংক্রমন জনিত যকৃত বা লিভারের প্রদাহ) 

সূচনা:  যকৃতের প্রদাহ বা হেপাটাইটিসের মধ্যে ’’’’ ভাইরাস জনিত প্রদাহ সব ছেয়ে বেশী হয় এবং বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে এই রোগ খুব বেশী দেখা দেয়, যদিও বা এ রোগ অনেক ক্ষেত্রে মারাত্বক নয় (প্রতি ১০০০ রোগীর মধ্যে ১জনের মৃত্যু ঝুকি থাকে।) তবু ও কিছুভুলবুঝাবুঝির কারনে এ রোগে আক্রান্তরা মারাত্বক চিকিৎসা বিভ্রাটের শিকার হন। পাশাপাশি  এধরনের রোগীর হেপাটাইটিস বি জনিত দীর্ঘস্থায়ী যকৃৎ প্রদাহ যদি পূর্ব থেকেই থেকে থাকে তবে রোগীর মৃত্যু ঝুকিও দেখা দিতে পারে।

ভাইরাসের নাম:      হেপাটাইটিস এ
সংক্রমনের মাধ্যম: খাদ্য ও পানীয়. লালা

কিভাবে বুঝা যাবে যে রোগীর হেপাটাইটিস এ ভাইরাস সংক্রমন জনিত যকৃত বা লিভারের প্রদাহ হচ্ছে বা আছে::
রোগীর ইতিহাস:: অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমন প্রদাহের মতো এই হেপাটাইটিস এ ভাইরাস সংক্রমন জনিত যকৃত বা লিভারের প্রদাহেও
(1)   তীব্র শরীর ম্যজ ম্যজ করে (**)ক্ষুধামন্দাসহ (*) জ্বর আসে,
(2)  এই জ্বর ১০১- ১০২ পর্য্যন্ত হয়ে থাকে।
(3)  এই জ্বর ১- ২  দিন স্থায়ী হয়।
(4)   জ্বরের পরে রোগীযে সব অসুবিধাগুলো নিয়ে আসতে পারে সেগুলো হলো
(ক) অস্বাভাবিক দুর্বলতা বোধ
(খ) তীব্র ক্ষুধা মন্দা
(গ) বমি বমি ভাব এবং
(ঘ)খেতে গেলে বমি করা এবং খেতে না পারা।
(5)    জ্বর শুরুর ৫-৬দিন পর রোগী  প্রশ্রাবের রং ঘন বা হলুদ/লাল হওয়ার কথো ও বলে
(6)  ৩-৪ দিনের মধ্যে যকৃতের কার্য্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য লিভার বা যকৃৎ হতে তৈরী রস SGPT পরিক্ষা (SGPT পরীক্ষা) করিলে তা স্বাভাবিকের ছেয়ে ৫-৬গুন বেশী পাওয়া যায়। এই সময়ে S. Billirubin নাও বাড়তে পারে। ( সুতরাং জন্ডিসের রোগীর জন্ডিস S. Billirubin পরিক্ষা করা বা মাপা বা দেখার ছেয়ে SGPT মাপা বা দেখা রোগ নির্নয়গত এবং প্রকৃতিগত অবস্থা নির্নয়ে তাৎপর্য্য রহিয়াছে)
(7)   রোগী উপরের পেটে অনেক সময় ডানপাশে ব্যাথা বা ভার-বোধের কথা ও বলতে পারে। 
(8)  বছরের বিশেষ সময়ে এ রোগের প্রকোপ বেশী হয় তাই খবর নিলে দেখা যাবে রোগীর আশেপাশে এরুপ রোগী আরো থাকতে পারে।
শারিরীক পরীক্ষায় :  *রোগীকে খুব রুগ্ন ও ক্লান্ত দেখাবে।
                                  *পানি স্বল্পতার চিহ্ন থাকতে পারে
*পেটের উপরের অংশে ডান পাশে চাপ দিলে ব্যাথা অনুভব  করিবে।
*চোখের উপরের পাতা উপরের দিকে আলগিয়ে ধরলে চোখের সাদা অংশের আবরন হলুদাব দেখাবে (যাকে জন্ডিস বলা হয়)। 
আরো নিশ্চিৎ হওয়ার জন্য  SGPT পরীক্ষা করিলে তা বেশী পাওয়া যাবে। তবে রোগের গুরুত্ব এবং পরিনতি আন্দাজ করার জন্য হেপাটাইটিস বি (বর্তমানে বা অতীতে সক্রমিত) HBsAg এবং সংশ্লিষ্ট এন্টি-বডিগুলোও পরীক্ষা করে দেখার তাৎপর্য্য আছে। 
কারো রক্তে HBsAg পাওয়া গেলে অন্যান্য যে পরীক্ষাগুলো করা প্রয়োজন ।
তাৎপর্য্য
HBsAg
Anti-HBc
Anti-HBs
IgM
IgG
Incubation Period
(+)
(+)
(-)
(-)
Acute Hepatitis

               Early
(+)
(+)
(-)
(-)
               Established
(+)
(+)
(+)
(-)
               Established (Occ)
(-)
(+)
(+)
(-)
Convalescence

                3 – 6 months
(-)
(±)
(+)
(±)
                6 – 9 months
(-)
(-)
(+)
(+)
Post Infection

                 >1yr
(-)
(-)
(+)
(+)
                   Uncertain
(-)
(-)
(+)
(-)
Chronic Infection

                    Usual
(+)
(-)
(+)
(-)
                    Occasional
(-)
(-)
(+)
(-)
Immunisation (- Infection)
(-)
(-)
(-)
(+)
(+) = টেষ্টে অস্তিত্ব পাওয়া যাবে অর্থাৎ টেষ্ট পজিটিভ থাকবে,
(-) = টেষ্টে অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না অর্থাৎ টেষ্ট পজিটিভ থাকবে না,
(±) = টেষ্টে অস্তিত্ব পাওয়া যেতে ও পারে না যেতে পারে,পাওযা গেলেও খুব কম পরিমানে
চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপনা
 যেহেতু রোগটি ভাইরাস জনিত কারনে এবং এই ভাইরাসের নিদ্দিষ্ট কোন ঔষধ নাই সেহেতেু কোন এন্টিভাইরাল ব্যবহার করাযাবে না।
এই রোগ আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়।
তাই কিছু ব্যাপার করা ও না করার ব্যপারে সতর্ক থাকতে হবে।

কি কি করা উচিৎ এবং কি কি করা উচিৎ না
(0)   রোগী সব ধরনের খাবার খেতে পারবে। সাধারনক্ষেত্রে বাছাই করা খাদ্য যেমন  মাংস,
     তেল, দুধ না খেতে বলার তেমন যৌক্তিকতা নেই। তবে S. Billirubin রক্তে বেশী বেড়ে  
      গেলে যেহেতু আন্ত্রিক রসে বাইল রসের পরিমান কমে যাই সেহেতু অন্ত্রে চর্বি জাতীয়
      খাবার আর পরিপাক হইনা। সুতরাং জন্ডিসের হলুদ (*চোখের উপরের পাতা উপরের
      দিকে আলগিয়ে ধরলে চোখের সাদা অংশের আবরন হলুদাব দেখাবে যাকে জন্ডিস বলা
      হয়) অর্থাৎ S. Billirubin বেড়ে গেলে খাদ্যে চর্বি জাতীয় উপাদান কম থাকলে ভালো। 

(1)   রোগীকে বিশ্রামে থাকতে হবে,  তবে একদম বিছানাই শুয়ে থাকার মতো বিশ্রামের প্রয়োজন নাই।

(2)  বেশী বেশী তরল বা পানীয় থেতে হবে যেমন চিনির শরবৎ, ডাবের পানি, যে কোন টাটকা ফলের রস বা আখের রস অর্থৎৎ শরীরে গ্লুকোজ ও পটাশিয়াম এবং ’’ভিটামিন  সি’’ আছে বা তৈরী হবে সেই রকম উপাদান সহ পানীয়। তবে ঘন ঘন গ্লুকোজ শরবৎ বেশী উপকারের না হলেও এবং বিরক্তিকর ও বটে।

(3)  পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি যাতে আরো  বেশী পাওয়া যাই সেজন্য রোগীকে টাটকা ফল যেমন, কলা, আমড়া, আংগুর, আম ইত্যাদি প্রতিদিন কিছু না কিচু খেতে হবে।

(4)   পায়খানা পরিষ্কার রাখার জন্য শাক বেশী করে খেতে হবে, পায়খানা শক্ত বা না হলে লেক্টুলোজ সিরাপ খখেতে হবে।

(5)   যেহেতু রোগটি ছোয়াঁছে সেহেতু রোগীর ব্যবহৃত থালা-বাসন আলাদা রাখতে হবে।
(6)  রোগীকে আশ্বস্থ করিতে হইবে যে এ রোগ ২৫-৩০দিনেই ভালো হয়ে যাবে। তবে ডাক্তারের পরামর্শছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা যাবে না।

(7)   বমির কারনে রোগী কিছু খেতে ণা পারলে বা খেয়ে রাখতে না পারলে রোগীকে আইভি ফ্লুইড দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে, শরীরের পানি ও গ্লুকোজ কমে যাওয়া রোধ করার জন্য। এ ক্ষেত্রে ১০% গ্লুকোজ ইন ওযাটার এবং ৫% গ্লুকোজ ইন স্যালাইন শ্রেয়। (কারন বেশী ঘণত্বের IV Fluid এর বেশীক্ষন স্থায়ীভাবে IV channel রাখা হলে শীরার গাত্রে প্রদাহ হতে পারে।)  তাতে গ্লুকোজ থেকে যকৃতের কিছুটা উপকার আশাকরা যেতে পারে। তবে প্রতিদিন এরুপ IV Fluid দেয়া ঝুকিপুর্ন ও হতে পারে।
(8)  ভেষজ বা আয়ুর্বেদীয় কিছু ঔষধের উপকারীতা ও কার্যকারিতা নিয়ে বিশ্বাস আছে আমাদের সমাজে, তবে সেগুলো পরীক্ষিতভাবে প্রমানিত নয়, সেহেতুু সেগুলো ব্যবহার ঠিক নয় অনুরুপ কারনে কোন ঝারফুক করা পানি সেবনে ও হিতে বিপরীত হতে পারে।

(9)   তবে মনে রাখতে হবে যে, যকৃতের অনেকগুলো কাজের মধ্যে একটা প্রধান কাজ হলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় (ঔষধের সাথে হলেও) কিছু শরীরে ঢুকলে তা নষ্ট করে ফেলা। প্রদাহের কারনে যকৃতের সেই কাজের ক্ষমতা লোপ পাই। এ সময়  ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় (ঔষধের সাথে হলেও) কিছু শরীরে ঢুকলে তা   যকৃৎকে আরো ক্ষতিগ্রস্থ করবে বিধায় ভিটামিন বি কম্লেক্স ও ভিটামিন সি ছাড়া যুক্তি সংগত প্রয়োজন বিবেচনা না করে অন্য কোন ঔষধ দেয়া উচিৎ নয়।  যেহেতু বমির একটা কারন পাকস্থলির অম্লতা ও হতে পারে সেহেতু  H2 Blocker  Ranitidine  দেয়া যেতে পারে।
(10)                     রোগী যদি অন্য কোন ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন থাকে বা যদি পূর্ব থেকেই কোন রোগের জন্য ঔষধ খেয়ে আসছিলো যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস বা রুমেটয়েড আর্থরাইটিস  তবে তাকে উক্ত রোগ এবং ঔষধের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ  নিতে বলা উচিৎ।

(11)                     যকৃৎ প্রদাহের পরীক্ষা SGPT স্বাভাবিক অবস্থায় নেমে গেলেই রোগীকে সুস্থ বলা যাবে। এ ক্ষেত্রে S. Billirubin পরীক্ষা তেমন তাৎপর্য্য বহন করে না। ২২ -২৫াদন পর ও যদি SGPT বেশী থাকে তবে যকৃৎ-এর কার্য্য ক্ষমতা যাচাই, উচ্চ SGPT এর অন্যকোন কারন আছে কিনা তা যাচাইএর জন্য অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করাও প্রয়োজন। এরুপ রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
(12)                    হেপাটাইটিস এ সংক্রমনজনিত যকৃৎ প্রদাহের এরুপ কিছু কিছু রোগীর, বিশেষত যাদের পূর্ব থেকেই হেপাটাইটিস বি সংক্রমন ছিল, অবস্থা হঠাৎ খুব খারাপ হয়ে যেতে পারে যখন মৃত্যু ঝুকি ১০০%, এই খারাপ অবস্থা বুঝা যাবে কিছু উপসর্গ দেখা দিলে যেমন পেটে পানি আসতে পারে, অজ্ঞানাবস্খার হতে পারে, কালো পায়খানা ও হতে পারে, রক্ত বমি করতে পারে (Fulminant hepatitis)| এরুপ রোগীকে তাৎক্ষনিক হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিতে হবে।
(13)                    হেপাটাইটিস বি রোগের মতো এই রোগের ও প্রতিষেধক ভ্যাকসিন আছে, তবে তা প্রতি বছর দেয়া প্রয়োজন।
(14)                     জীবানুমুক্ত খাদ্যাভ্যাস ও পানাভ্যাস এবং ব্যক্তিগত হাইজিন বিষয়ে সতর্কতা এ্ রোগ হওয়া অনেকাংশে প্রতিরোধ করে।


No comments:

Post a Comment