টায়ফয়েড জ্বর (এন্টারিক
ফিভার)
শরীরের যেকোন তন্ত্র এবং অংগ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়ে জ্বর
হতে পারে তবে এক্ষেত্রে টায়ফয়েড
জ্বর নির্নয় একটু জটিল, বিধায় আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে
টায়ফয়েডের জীবানুর নাম: সালমোনেলা টাইফি
রোগ ছড়ায়: টায়ফয়েড
জীবানুতে দুষিত পানি
পান ও খাবার খাওয়ার মাধ্যমে.
কখন বেশী হয়: বছরের যে কোন সময়
হতে পারে।
টায়ফয়েড জ্বর (এন্টারিক
ফিভার) এর প্যাথলজী নিয়ে কিছু আলোচনা:: এই রোগের জীবানু রক্তে বাহিত
ও বংশবৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় এবং তা রক্ত দ্বারা বাহিত
হয়ে শরীরের বিভিন্ন তন্ত্রে যায় বিধায় শরীরের
বিভিন্ন তন্ত্রের কিছু না কিছু উপসর্গ দেখা দেয় (নিচের ছবি দ্রষ্টব্য)। কিন্তু এই
রোগে প্রধান রোগপ্রক্রিয়ার প্রদাহ ও ছোট ছোট ঘা আকারে ক্ষুদ্র অন্ত্রনালীর গায়েই
হয়, ফলে অন্ত্রনালী ফুলে যায় এবং অন্ত্রনালীতে ছিদ্র হয়ে যেতে পারে। আন্ত্রিক
গাত্র সংক্রমনের কারনে রোগের ২য় সপ্তাহের দিকে রোগীর পাতলা পায়না ও হতে পারে। অনেক
সময় মলে রক্ত মিশ্রিত থাকে বিধায় লালচে কালো দেখাতে পারে। এ সময় আক্রান্ত রোগীর
মলের মাধ্যমে এই রোগের জীবানু নির্গত হয়। এ পর্য্যায়ে রোগীর মূত্র এবং মল ২টারই
পরীক্ষায় সালমোনেলা
টাইফি জীবানুর উপস্থিতি প্রমান
পাওয়া যায়। তবে প্রথম সপ্তাহে রক্তেই টায়ফয়েড এ জীবানু পাওয়া যাবে।
টায়ফয়েড
জ্বরের বৈশিষ্ট্য সমূহ ছবিতে (সাংকেতিক)

টায়ফয়েড জ্বরের বৈশিষ্ট্য
সমূহ:--
@বছরের
যে কোন সময় এই সংক্রমন জনিত জ্বর হতে পারে।
@এই জ্বর কোন নিদ্দিষ্ট লক্ষন
ছাড়া আস্তে আস্তে উঠে।
এতে যে উপসর্গ গুলো থাকে
সেগুলো হলো
4মাথাব্যাথা,
4শুষ্ক কফহীন কাশী,
4শরীর ম্যজম্যজ করা সহ
4ক্ষুধা মন্দা ও
4দিনের পর দিন এই জ্বর বাড়তে
থাকে যা প্রথম ১০১ থেকে প্রথম সপ্তাহের শেষে
১০৪/১০৫ ডিগ্রী হয়ে যায়,
4 টায়ফয়েড জ্বর উঠার সময়
সাধারনত কাপুনী থাকেনা।
4পায়খানা কষা থাকতে পারে, তবে
বাচ্চাদের ডায়রিয়া হতে পারে।
4১ম সপ্তাহের শেষের দিকে
রোগীকে বিষাক্ত মনে হবে। এসময় রোগী প্রলাপ বকতে
পারে।
অসুস্থতার ২য় সপ্তাহে
(প্রায়শঃবেশীরভাগ রোগী ৭-১০দিনের
মধ্যে সনাক্ত হয়ে থাকে)
তখন রোগীর উপরের ছবিতে বর্ণিত
লক্ষনগুলো পাওয়া যেতে পারে।
এগুলো হলো (ছবি দ্রষ্টব্য)
বোধহীন মানসিক
অবস্থা, সামান্য বধিরতা, বিষাক্ত চেহারা, ১০০০-১০৪০ জ্বর, আবৃত জিহবা, শুষ্ক চামড়া.
বক্রিয়াল কাশী, পেটে কিছু ব্যাথা, রোগীর শরীর ও মুখ থেকে পচাঁ-খড়ের গন্ধ,
স্প্লিনের স্ফিতি, লেচির মতো পেট, প্রস্রাব না হতে চাওয়া ইত্যাদি।
অসুস্থতার ২য় সপ্তাহে
তখন রোগীর
সার্বক্ষনিক জ্বর থাকে যা ১০২ - ১০৫ পর্যন্ত হতে পারে,
নাড়ী ১০০/মিনিট
এর কম থাকে। উপরের পেটের চামড়া এবং
বুকে ১মিমি এর কম
ব্যাসার্ধের ৮-১০টা লাল দানা দেখা যেতে পারে (রোজ স্পট)।
পেট ধরতে লেচি বা
মাখানো ময়দার মতো অনুভুত হবে এবং
সামান্য চাপ দিলে
পেটে ব্যাথা অনুভুত হবে।
রোগী অস্থির থাকতে
পারে ও প্রলাপ বকতে পারে।
১৪ দিনের পরও (যদি যথাযত চিকিৎসা করা না হয়)
রোগীর অবস্থা আরো
খারাপ হয়ে যেতে পারে এবং
তীব্র পানি স্বল্পতা
সৃষ্টি হতে পারে।
রোগীর নাড়ী দ্রুত
হয়ে যেতে পারে।
অন্য কোন জটিলতা দেখা না দিলে ৪র্থ সপ্তাহে ক্রমশঃ রোগীর জ্বর কমে
যেতে থাকে এবং রোগী সুস্থ হয়ে উঠে।
টায়ফয়েড এর জটিলতা সমূহ
@না খেতে পারার কারনে ও বমি এবং তরল পায়খানার কারনে পানি স্বল্পতা হতে
পারে,
@যেহেতু রক্ত এবং আন্ত্রিক নালীর ভেতরে সংক্রমন হয়, সে জন্যে এইরোগে রক্তবাহিত হয়ে
টায়ফয়েড জীবানু
শরীরের যেকোন জায়গায় বা অংশে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
! খাদ্য নালী বা অন্ত্র থেকে রক্তপাত বা অন্ত্র ফুঠো হয়ে যেতে পারে।
! পিত্তথলি এবং কদাচিৎ লিভারের প্রদাহ হতে পারে।
! শ্বাসযন্ত্রের
প্রদাহ, তাতে ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া এবং ফুসফুসে পূঁজ হতে পারে।
! হৃদযন্ত্রের মাংসপেশীর, ইহার আবরনির এবং রক্তনালীর প্রদাহ হতে পারে।
! ইহাছাড়াও ব্রেইন এবং মুত্রতন্ত্রের প্রদাহ হতে পারে।
টায়ফয়েড রোগ নির্নয়:-
@টায়ফয়েড রোগ নির্নয়ের জন্য ইতিহাস নেয়া এবং @যথাযত
শারীরিক পরীক্ষার বিকল্প নেই,
@প্রথম সপ্তাহে রক্ত কালচার
করা গেলে জীবানু সনাক্ত করা যায়, তবে এই কালচার পরীক্ষা ব্যয়বহুল এবং সর্বত্র
সম্ভব নয়। তথাপি অসুস্থতার প্রথম সপ্তাহে রক্তের শ্বেত কনিকার পরিমান (TC
of WBC) দেখা যেতে পারে, ৪০০০ থেকে
যা কমে যেতে পারে। তবে
তা ভাইরাস সংক্রমনে ও হতে পারে।
@বিডাল টেষ্ট (Widal Test): এ পরীক্ষা ১ম সপ্তাহে (জ্বরশুরুর
প্রথম ৭দিন) অর্থহীন। ২য় সপ্তাহের শুরু থেকে TO এবং TH বাড়তে থাকে (যথাযত চিকিৎসা না হলে)।
তবে TO এবং TH না বেড়ে, শুধু AH এবং BH বাড়লে
কোন তাৎপর্য্য নেয়, যা পুর্বের সংক্রমন অথবা টায়ফয়েড টিকা নেয়ার জন্য ও হতে পারে।
টায়ফয়েড রোগ এর চিকিৎসা::
সঠিক ও যথাযত এবং কার্যকর টায়ফয়েড রোগ এর
জীবানু নাশক প্রয়োগ ছাড়াও অন্যান্য উপসর্গ ও লক্ষনগুলোর প্রশমনের চিকিৎসা যুগপৎ
দেয়া উচিৎ।
@সঠিক ও যথাযত এবং কার্যকর জীবানু নাশক প্রয়োগ
যথাযত ব্যবহার না হওয়াতে এবং অন্যান্য অনেক কারনে টায়ফয়েড রোগএর
জীবানু নাশক এন্টিবায়োটিক গুলোর অনেকটাই টায়ফয়েড রোগএর জীবানুর উপর কার্যকারিতা
কিছটা হারিয়ে ফেলেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো.
ক্লোরামফেনিকল, কোট্রাইমোক্সাজল,
এমোক্সিসিলিন,
সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ওফ্লক্সাসিন, ফিফ্লক্সাসিন , সেফিক্সিম , সেফ্ট্রিক্সন.
F(১) ক্লোরামফেনিকল
(১০০মিগ্রা/কেজি/দিন ৪ ডোজে ভাগ করে ৬ঘন্টা অন্তর)
(খারাপ ও মারাত্বক পাশ্বপ্রতিক্রিয়ার কারনে এ এন্টিবায়োটিক
বর্তমানে ব্যবহৃত হয় না)
F(২) কোট্রাইমোক্সাজল (২৫মিগ্রা/কেজি/দিন, ২ ডোজে ভাগ করে
১২ঘন্টা অন্তর)
F(৩) এমোক্সিসিলিন
(১০০মিগ্রা/কেজি/দিন ৪ ডোজে ভাগ করে ৬ঘন্টা অন্তর)
সম্প্রতি কুইনোলন
গ্রুপের ওষুধের মধ্যে
F(৪) সিপ্রোফ্লক্সাসিন (২০-৩০মিগ্রা/কেজি/দিন ২ ডোজে
ভাগ করে ১২ঘন্টা অন্তর )
তবে বর্তমানে ২য় ও ৩য় প্রজম্মের কুইনোলন গ্রুপের ওষুধের মধ্যে
০১. ওফ্লক্সাসিন (২০০ মিগ্রা দিনে ২ বার করে
১০-১৪ দিন)
4এ এন্টিবায়োটিক ১৪ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের উর্ধে গর্ভবতীদের
ব্যবহারের অনুমোদন নাই।
4এ এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
০২. ফিফ্লক্সাসিন (৪০০
মিগ্রা দিনে ২ বার ১০-১৪ দিন)
4এ এন্টিবায়োটিক ১৪ বছরের নিচে এবং ৬৫
বছরের উর্ধে গর্ভবতীদের ব্যবহারের অনুমোদন নাই।
4এ এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে কিছু
সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
ইহা দেখাগেছে যে ৩য় ও ৪য় প্রজম্মের সেফালোস্ফোরিন গ্রুপের ওষুধের
মধ্যে টায়ফয়েড জীবানুর উপর
কার্যকর হচ্ছে (যে কোন বয়সের জন্য এবং র্
গর্ভবতীদের ব্যবহারের জন্য এই
ওষুধগুলো খুবই নিরাপদ কিন্তু ব্যয়বহুল)
০১. মুখে সেফিক্সিম: (১০-১২মিগ্রা/কেজি/দিন ২ ডোজে ভাগ
করে ১২ঘন্টা অন্তর ১০-১৪ দিন)
০২. ইন্জ সেফি্ট্রিক্সন. ডোজ: (৫০-৭৫মিগ্রা/কেজি/দিন ১ ডোজ মাংসপেশীতে ৭-১০ দিন)
জ্বর এর জন্য কি করা যায়:
@স্বাভাবিক ঠান্ডা-পানিভেজা কাপড়ে
পুরো শরীর মুছতে হবে, বারবার মাথা ধোয়া প্রয়োজন নাই।
@জোরে ফ্যান চালিয়ে দিতে হবে বা বাতাস
করতে হবে,
@ঘন ঘন বেশী পানি বা অন্য কোন ঠান্ডা
পানীয় পান করতে রোগীকে পরামর্শ দিতে হবে।
@জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল দিতে হবে,
** প্যারাসিটামল খাওয়ানো যায়, আবার মলদ্বারেও প্রয়োগ করা যায়।
ডোজ:- প্রতি কেজী শরীরের ওজনের জন্য ১৫ মিগ্রা প্রতিবার, অবশ্যই চার
ঘন্টার মধ্যে পুনঃ প্রয়োগ করা যাবে না। ১ বড়ি প্যারাসিটামলে থাকে=৫০০মিগ্রা এবং ১ চামুচে=১২০ মিগ্রা
কিন্তু
এসপিরিন দেয়া কখনো উচিৎ না এবং
অন্য কোন ব্যাথানাশক (NSAID) দেয়া ঠিক নয়।
বমি হলে কি করতে হবে
@কেন্দ্রিক কারনে যেহেতু এই বমি হয়
সেহেতু বমি বন্ধ করার জন্যে কোন ওষুধ দেয়া ঠিক না। তবে ডোমপ্যারিডন চেষ্টা করে
দেখা যেতে পারে।
@বমি হওয়াকালীন সময়ে কোন কিছু খেতে না দিয়ে বমি বন্ধ হওয়ার
১৫-২০ মিনিট পর বেশী পরিমানে পানি বা অন্য কোন ঠান্ডা পানীয় পান করতে বা তরল খাবার
খাওয়ার জন্য রোগীকে পরামর্শ দিতে হবে।
@বারবার বমি হলে বা তরল পায়খানা হলে
প্রয়োজনে আইভি ফ্লুইড দেয়া প্র্রয়োজন যাতে শরীরে পানি স্বল্পতার সৃষ্টি না হয়। @বেশী
জ্বর থাকাবস্থায় কোন কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলতে হবে তাতে বমির উদ্রেক হতে
পারে।
@খেতে নাপারার কারনে পাকস্থলীর অম্লতা
বেড়ে যায়। আর পাকস্থলীর এই অম্লতা না বাড়ার জন্য (যা ক্ষুধা মন্দা এবং বমির কারন
হতে পারে অনেক সময়) H2 Blocker
(Ranitidine) দেয়া যেতে পারে।
প্রলাপ বকলে
প্রলাপ বকলে রোগীকে ডায়াজেপাম দিতে হবে ০.১৫মিগ্র/কেজী দিনে ২/৩বার
পানিস্বল্পতা প্রতিরোধের জন্য
বমি হলে বা পাতলা পায়খানা হলে পানিস্বল্পতা প্রতিরোধের জন্য আইভি
ফ্লুইড দেয়া পয়োজন হতে পারে, তবে এ ক্ষেত্রে ৫% ডেক্সট্রোজ ইন স্যালাইন সুপারিশ যোগ্য।
মনে থাকলে ভালো:-
০১. সমপ্রতি টায়ফয়েড জ্বর ছিলো এ রুপ কোন রোগী যদি হঠাৎ তীব্র পেট
ব্যাথা নিয়ে আসে তবে পেটের অন্ত্রের ছিদ্র হয়ে যাওয়া ও বিবেচনা করা প্রয়োজন।
০২. টায়ফয়েডের জীবানু পিত্তথলিতে রয়ে যেতে পারে বিধায় এন্টিবায়োটিক
১৪ থেকে ২১দিন প্রয়োগ করা
হয় মাঝে মাঝে।
sir, patient treatment cholce 5 days, injection daoa hocce but jor komce na always 103 104 jor thake, antibiotic nd supositor daoa hocce, jor komce na kano? r purapuri sustho hoite kotodin lage?
ReplyDelete