রোগীর উত্তাপিত উপসর্গ গুলঃ ব্যথা ও মাথা ব্যাথাঃ ব্যাথা (Pain)
ব্যথা খুবই সাধারন উপসর্গ। এই উপসর্গের নির্ভুল বিশ্লেষন রোগ নির্ণয়ের সহায়ক হতে পারে। ব্যাথার সতর্ক ও সম্পূর্ন ইতিহাস নেয়া সবসময় উচিৎ। ব্যাথার বিভিন্ন প্রকৃতি বণৃনা করার জন্য রোগীকে উৎসাহিত করতে হবে। ব্যাথার নিয়মতান্ত্রিক বিশ্লেষনের জন্য নিচের বৈশিষ্টগুলো জানতে হবে
Ê প্রধান স্থান Ê ছড়ানোর প্রকৃতি Ê প্রকৃতি Ê তীব্রতার মাত্রা
Ê ব্যাপ্তিকাল Ê কয়বার হয় এবং কতক্ষন পর পর Ê হওয়ার বিশেষ কোন সময় আছে কিনা
Ê কিসে বাড়ে Ê কিসে কমে Ê সংগে অন্য উপসর্গ
ব্যাথা উপসর্গের জন্য মুল বিবেচ্য বিষয় সমূহ
F ব্যাথা উপসর্গের পূর্ণ বিশ্লেষন থেকে একজন চিকিৎসকের
Ê ব্যাথার উৎসস্থল এবং
Ê ব্যাথার কারকতা জানতে পারা উচিৎ
F ব্যাথা শুরু, কমার, বাড়ার কারন সমূহ এবং সংগীয় অন্য উপসর্গ থেকে রোগের উত্তম ক লুপাওয়া যেতে পারে।
F কোন সংগীয় বৈশিষ্ট বা অন্য উপসর্গহীন ব্যাথা দৈহিক কারনের ছেয়ে মানসিক কারনের সম্ভাব্যতা প্রকাশ করে।
F দেহের উপরিস্থিত অংশের উৎসারিত ব্যাথা স্থানীয়করন ভেতরের ব্যাথা থেকে ও সঠিক ভাবে নির্ণয় করা যায়। শরীরের ভেতরের একক যন্ত্রের ব্যাথা (যেমন হার্ট, খাদ্য নালী) দেহের মাঝ লাইন বরাবর অনূভূত হয়।
|
Ê মাথা কামড়ি (Headache)
মূল্যায়ন করার উপসর্গগুলোর মধ্যে মাথা কামড়ি (Headache) একটি খুবই সাধারন ও বেশী চাওয়ার একটি। এক্ষেত্রে শারীরিক পরীক্ষা অপেক্ষা বিস্তৃত ইতিহাস নেয়া অধিকতর গুরুত্বপূর্ন ও সহায়ক। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মাথাকামড়ি হয় টেনসান জনিত কারনে যাতে আবেগ প্রসূত কারকগুলোই প্রধান এবং কোন রোগ বা শারীরিক বৈকল্য পাওয়া যায় না। জ্বর এবং যে কোন তন্ত্র-সংশ্লিষট অসুস্থতায় মাথাকামড়ি একটি সুনিদ্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য।
মাথাকামড়ি হয় নিম্ন বর্ণিত কারন সমূহে
Ø মস্তিস্কের বাইরের অসুস্থতা
টেম্পেরো মেন্ডিবুলার জয়েন্টের অস্টিওআথ্রাইটিস
সারভাইকেল স্পাইন সারভাইকেল স্পন্ডাইলোসিস
চোখ সম্পকৃত গ্লোকমা
দাঁত দাঁতের প্রদাহ
প্যারান্যাজাল সা্নাসের সাইনোসাইটস
মধ্যকানের প্রদাহ
ধমনির প্রদাহ মস্তিষ্ক ধমনীর প্রদাহ
Ø মস্তিস্কের ভেতরের অসুস্থতা
মাইগ্রেন
মেনিনজাইটিস বা্ মস্থিস্ক ঝিল্লির প্রদাহ
মস্তিস্কের ভেতরের বর্ধিত চাপ
· টিউমার
· সাবএরাকনয়েড্এ রক্তক্ষরন
Ø মানসিক কারনে শারীরিক অসুস্থতা
টেনশানজনিত মাথা কামড়ি
মাথাকামড়ির রোগীর যে সকল বিষয় অবশ্যই জেনে নিতে হবে, সেগুলো হলোঃ
Ê প্রধান স্থান বা মাথার কোন জায়গায় ব্যাথা
বিভিন্নধরনের মাথা কামড়ির স্থান বৈশিষ্ট
· কোন মাথাকামড়ি কোথায় অনুভুত হয়
Ø টেনশানজনিত মাথা কামড়ি মাথার দুপাশে, পৃরামাথাজুড়ে এবং গর্দানে
Ø ক্লাস্টার মাথাকামড়ি মাথার একপাশে, চোখ, নাক ও গন্ডে
Ø মস্তিষ্ক-ধমনীপ্রদাহ মাথাকামড়ি মাথারআবরনির ক্যাথা সহ এক পাশে
Ø ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া একপাশে,নার্ভের মেক্সিলারী ও মেডিবুলার শাখা সরবরাহকৃত স্থানসমূহে
Ø পোষ্ট-হারপেটিক নিউরালজিয়া একপাশে,ট্রাইজেমিনালনার্ভের অপ্থালমিক শাখা সরবরাহকৃত স্থানসমূহে
Ê বিকিরন বা ছড়ানোর প্রকৃতি
মাথার একপাশের কামড়ি গলা, নাক, চোখ, করন গন্ড ও মুখে বিকির্ন হলে মনে করতে হবে এটা স্নায়ু বা নার্ভ উৎসারিত ব্যথা, ট্রাইজেমিনাল নার্ভ সরবরাহকৃত এলাকার বাইরের মুখমন্ডলের ব্যাথা মানসিক কারনহেতু উৎপন্ন মাথাকামড়ি। গর্দানের দিকে ছড়াইয়ে পড়া মাথা কামড়ি টেনশান জনিত কারনে হয়
Ê প্রকৃতি
মাথার চতুর্দিকে টাইট বেন্ডের মতো বা মাথার উপরে চাপের মতো অনুভুত হয় যে মাথাকামড়ি তা টেনশান-জনিত মাথা কামড়ি নির্দেশ করে। অসুস্থ করিয়া ফেলে এরকম মৃদুব্যাথার বা তীব্র টন্টনে ব্যাথার মাথাকামড়ি মাইগ্রেন এবং থেকে থেকে অনুভুত হওয়া তীব্র গরমসূঁই-এর মতো ব্যাথা-সহ যে মাথাকামড়ি তা ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়াতে হয়।
Ê তীব্রতা বা মাত্রা
খুবই তীব্রতা নীয়ে যে মাথাকামড়ি গর্দানের ঋজুতা নিয়ে হঠাৎ শুরু হয় তা সাবএরাকনয়েড স্পেসে রক্তক্ষরন নির্দেশ করে আবার সময়ের সাথে যে মাথাব্যাথার আস্তে আস্তে তীব্রতা এবং ব্যাপ্তিকাল বাড়ে তা মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের উচ্চচাপের কারনে হয়। মাইগ্রেন, ক্লাস্টার মাথাকামড়ি ও ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়াতে ব্যাথার তীব্রতা থাকতে পারে।
Ê ব্যাপ্তিকাল
মাথাকামড়ির স্থায়িত্বকাল এবং মাথাকামড়ি কি মাঝে মাঝে হয়, নাকি সবসময় থেকে যায় তা জানা খুবই গুরুত্ব পূর্ন। অগ্রগতিহীন দীর্ঘদিনের মাথাকামড়ি মারাত্বক হতে পারে না। মাইগ্রেন জনিত মাথাকামড়ি ৬ থেকে ২৪ ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে
Ê কয়বার হয় এবং কতক্ষন পর পর
কোন মাথা-ব্যাথা ছাড়া সপ্তাহ বা মাসের পরপর কমসময় স্থায়ী থেকে থেকে যে মাথা কামড়ি অনুভুত হয় তা মাইগ্রেন, ক্লাস্টার মাথাকামড়ি ও ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।পোষ্টহারপেটিক নিউরালজিয়া এবং মস্তিস্ক-ধমনীর প্রদাহ জনিত মাথাকামড়ি হঠাৎ শুরু হয় এবং একই তীব্রতা নিয়ে থেকে যায় কিন্তু মস্তিস্ক-ঝিল্লির প্রদাহ জনিত মাথাকামড়ি এবং সাবএরাকনয়েড স্পেসে রক্তক্ষরন জনিত মাথাকামড়ি হঠাৎ শুরু হয় এবং সময়ের সাথে সাথে তীব্রতা বাড়তে থাকে।
Ê হওয়ার বিশেষ কোন সময় আছে কিনা
খুবই সকালে অনুভুত যে তীব্র মাথাব্যাথা ঘুমথেকে উঠে যেত বাধ্য করে তা মস্তিস্ক-ধমনীর প্রদাহ জনিত মাথাকামড়ি বা মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের উচ্চচাপের কারনেসৃষ্ট। মুখের নড়াচড়ার সাথে সাথে যে ব্যাথা বেড়ে যায় তা ট্রাইজেমিনাল বা গ্লোসোফেরিনজিয়াল নিউরালজিয়া হতে পারে। চিবানের বা চুষার সময় চিবুকে যে ব্যাথা হয় তা মস্তিস্ক-ধমনীর প্রদাহ জনিত মাথাকামড়ির অনুরুপ। ঋতুশ্রাব শুরুর সময় এবং মাসিক বন্ধহয়ে যাওয়ার সময় যে মাথাকামড়ি হয় তা মাইগ্রেন নির্দেশ করে।
Ê কিসে বাড়ে
মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের উচ্চচাপের কারনেসৃষ্ট মাথাকামড়ি বাড়ে
F সামনের দিকে ঝুকলে, কোথ দিলে বা কাশদিলে।
মাইগ্রেন-মাথাকামড়ি বাড়ে
F প্রসবোত্তর সময়ে, খুধার্ত অবস্থায়, চকলেট, মাখন, এলকোহল এবং টকফল খেলে।
Ê কিসে কমে
গর্ভাবস্থায় মাইগ্রেন মাথাকামড়ি হয়না হলে ও তীব্র হয় না।
যে কোন ব্যাথানাশকে মাথাকামড়ি কমে; কিন্তু টেনশানজনিত মাথাকামড়ি তেমন কমে না। সুমাট্রিপটান সেবনে মাইগ্রেন মাথাকামড়ি তাড়াতাড়ি সারে এবং
স্ট্যারয়েড সেবনে মস্তিস্ক-ধমনীর প্রদাহ জনিত মাথাকামড়ি দ্রুত কমে।
Ê সংগীয় অন্য উপসর্গ
বমি-ভাব এবং বমি হয় মাইগ্রেন-মাথাকামড়িতে এবং মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের উচ্চচাপের কারনেসৃষ্ট মাথাকামড়িতে। ক্লাস্টার মাথাকামড়িতে চোখ-নাক থেকে পানি ঝড়তে পারে।
মাথাকামড়ি উপসর্গের জন্য মুল বিবেচ্য বিষয় সমূহ
v মাথাকামড়ির স্থান রোগনির্ণয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন।
v টেনশানজনিত মাথাকামড়ি সবছেয়ে বেশী হয় এবং তা দীর্ঘদিন থাকতে পারে তবে এতে ঘুমের ব্যাঘাৎ হয়না।
v শরীরের অংগের রোগহেতু উৎপন্ন মাথাকামড়ি বাড়তেই থাকে যা টেনশানজনিত মাথাকামড়িতে হয়না।
|
No comments:
Post a Comment